‘ভয়’ আমাদের জীবনের সবচেয়ে সহজলভ্য বিষয়গুলোর অন্যতম একটি। ভয় যেন আমাদের জীবনের সকল বাঁকে লুকিয়ে আছে। ব্যার্থতা থেকে ভয় আসে, আসে সফলতা থেকে, এমনকি ভয় থেকেও ভয় আসে।
কোথায় ভয় নেই বলেন দেখি! কোন কিছু পাবার আগেই হারিয়ে ফেলার ভয়, না পাবার ভয়, পাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার ভয়, চেষ্টা করতে ভয় । আমাদের সকলকেই জীবনের কোনো না কোনো সময় ভয় তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
তো, ভয় পেলে কী হয়? তেমন কিছুই না, শুধু আমাদের পথ চলার গতি অতিরিক্ত মাত্রায় কমিয়ে দেয়। ভয় আমাদের সত্যিকারের সফলতর কাছে পৌঁছাতে দেয় না।
তবে ভয় আমাদের চিরদিন ধরে রাখতে পারে না, যদি না আমরা তাদের ধরে রাখি। তাই আজেকের এই লেখাটি ভয় কাটিয়ে উঠার বিভিন্ন উপায় নিয়ে। এখন আমরা ৯টি শীর্ষ উপায়ের কথা বলব-
১. ধারণা থেকে বাস্তবতাকে আলাদা করুন
যা নিয়ে ভয় পাচ্ছেন সে বিষয়ে আপনার ধারণাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিজেকে জিঙ্গেস করুন- বাস্তবিক ভাবে বিষয়টা কী? ফ্যাক্ট গুলো লিস্টআউট করুন এবং ধারণার জায়গায় সেগুলোকে স্থলাভিসিক্ত করার চেষ্টা করুন।
২. যে কারনে ভয় পাচ্ছেন সেটা শনাক্ত করুন
ভয়টা যে কারণে আপনার ভেতরে এসেছে সে কারন বা পরিস্তিতি খুঁজে বের করুন। নিজেকে অভিযুক্ত না করে বা নিজের সাফাই না গেয়ে কারন খুঁজতে পারলে, এই চেষ্টার ফলে যা শিখবেন তা আপনার ভয় কাটাতে সহায়তা করবে।
৩. আপনার শরীরের কোথায় ভয় বাস করে সেটা জানার চেষ্টা করুন
অনেক সময় ভয়টা শারীরিকভাবে বাসা বাধে। অর্থ্যাৎ যখন কেউ ভয় পায়, অনেকের ক্ষেত্রেই তখন শরীরের বিভিন্ন অংশে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এটা বিভিন্ন মানুষকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
আপনার ক্ষেত্রেও এমনটি হয় কিনা তা শনাক্ত করুন। এটা আপনার শরীরকে কী ভাবে প্রভাবিত করছে? এবং সে আলোকে নিজের শরীরের টেককেয়ার করুন।
যেমন: যদি আপনার পিঠে চাপ ধরে তাহলে আপনি স্ট্রেচ,ফোম,রোলিং ইত্যাদি শিখতে পারেন। এতে ব্যাথাও দূর হবে, ভয়ও কমে আসবে।
৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অনুশীলন করুন
শুরু থেকে অনুশীলন করতে চাইলে প্রতিদিন ১-৩টা বিষয়ের ওপর সম্পর্কিত মানুষ বা সত্ত্বার উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেষ্টা করেন। এই জন্য একটা চার্টলিস্ট তৈরি করতে পারেন। ছোট নাকি বড় জিনিসের ওপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন, সেটা আসলে ম্যাটার করবে না এক্ষেত্রে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাটা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার পজিটিভ মাইন্ড সেট করতে। আর এর ফলে ভয়টাকে ওভারকাম করতে আপনি অনেকটাই পারদর্শি হয়ে উঠবেন।
৫.আপনার ভেতরের কথা শুনুন
আপনার ভেতরের কথা গুলো মনিটর করে বোঝার চেষ্টা করুন। যে নেগেটিভ কথা আপনার বন্ধুকে বলতে পারবেন না সেরকম কথা আপনি নিজেকেও বলবেন না।
নিজের সাথে সব সময় পজিটিভ কথা বলুন এবং নিজেকে নিজের শক্তির কথা মনে করান।
৬. নতুন একটা প্যাটার্ন তৈরী করুন
একসময় ভয় পাওয়ার মুহুর্ত আর অনুভূতিটা অতীত হয়ে যাবে। তাই এর পরের যে সময়টা আসবে সেই সময়টা আপনার জন্য কতটা উপভোগ্য হবে তা নিয়ে ইতিবাচক কথা বলুন নিজের সাথে। যখনই ভয় পাবেন তখনই এই প্যাটার্নটা সামনে নিয়ে আসবেন বারবার।
৭.একটি অর্ধপূর্ণ গ্লাসের দিকে তাকান
উপলব্ধি খুব শক্তিশালি জিনিস। কোনো ঘটনা আপনি কিভাবে উপলব্ধি করেছেন তার ওপর ভিত্তি করে সেই ঘটনার প্রতক্রিয়া দিয়ে থাকেন আপনি।
তাই সব সময় পজিটিভ চিন্তা করুন। পজিটিভ উপলব্ধি আপনার সাফল্যের দিকে পৌঁছাতে বেটার সুযোগ তৈরি করে।
এটা আবশ্যই রাতারাতি ঘটবে না। আপনাকে পজিটিভ উপলব্ধির অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখবেন কোনো খারাপ চিন্তা নিয়ে অনেক বেশি ভাবলে সেটা একটা সময় গিয়ে অভ্যাসে পরিনিত হবে।
৮.শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন
শ্বাস-প্রশ্বাস আপনার শরীরকে চালাতে সাহায্য করে। আপনি যখন শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেন তখন আপনার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। মানে ওই মুহুর্তটা আপনার সকল অনুভূতিও ভোতা হয়ে যায়।
আপনি গ্রাউন্ডিং ব্যায়াম করতে পারেন। অথবা নিজেকে শান্ত করার জন্য বা নিজের মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিদিন যেকোনো সময় ৫বার গভীর দীর্ঘশ্বাস নিতে পারেন। এই ব্যায়াম দিয়ে দিন শুরু করলে আপনি সারা দিনটা ভালোই অনুভব করবেন।
৯. নিজের জন্য একটা নিরাপদ পরিবেশ তৈরী করুন
কোন কিছুতে ভয় পাবার মুহুর্তটার কথা ভাবুন। পরিবেশ বা পারিপার্শ্বিকতার ভিন্নতার কারনেই অনেক সময় আর ভয়টা থাকে না আমাদের। তাই এপর্যায়ে এমনি একটা পরিবেশ তৈরীর কথা বলবো আমারা যেখানে আপনি নিজেকে নিরাপদ মনে করবেন। এবং কোনো ভয় অনুভূত হবে না।
যখনই কোন ভয় আপনাকে গ্রাস করতে চাইবে আপনি এই বিশেষ পরিবেশে নিজেকে নিয়ে যাবেন। আর এই স্থানটি হতে পারে আপনার বেড রুম, খেলার মাঠ অথবা নদীর ধার কিংবা অন্য সাধারণ বা অসাধারণ কোনো কিছু।
শেষ করার আগে:
দয়া করে এটা মনে রাখবেন, ভয় দূর করার অনেক কৌশলের মধ্যে এই গুলা শুধুমাত্র ৯টি কৌশল। এর সবগুলো যে সবার ওপর একই ভাবে কাজ করবে সেরকম কিছু না। কিন্তু এইটা শুরু করার কিছু ধারা।
এই কৌশল গুলো প্রয়োগ করা শুরু করুন দেখবেন কোনো ভয় আপনার লক্ষ্য পূরনের গতিপথ ধরে রাখতে পারবে না আর।