আত্মবিশ্বাস!
জীবনকে এগিয়ে নেবার অন্যতম হাতিয়ার এটি। একে এমনকি সব কিছুর মূল চাবি কাঠিও বলা যয়।
অন্তত আমার লাইফ কোচিংএর কয়েকটা বছর তাই বার বার প্রমান করে যাচ্ছে। আমার ব্যক্তি ও ক্লায়েন্টদের সাথে কাজের অভিজ্ঞতা তো তাই বলে।
হ্যা, জীবনকে উন্নত করার জন নানা ধরনের কৌশল রয়েছে, রয়েছে হরেক রকম চিন্তার বা আচারণের ধারা উপধারা। এছাড়া অজস্র বাস্তবিক টিপস আপনাকে সামনে এগুতে সাহায্য করে। নিজের জীবন নিয়ে প্রশান্ত চিত্তও আপনাকে এগিয়ে রাখে ঠিকই।
কিন্তু এই গুলো সব থাকার পরও একটা জিনিসের অভাব সবকিছু সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিবে। তা হলো আপনার ভেতরের মানুষটা আর তার কার্যক্ষমতা সম্পর্কে আপনার বিশ্বাসবোধ।
এটা কোন ভাবেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, কেবল আপনি, হ্যা কেবল আপনিই নিজেই কিন্তু নিজেকে গভীরভাবে চেনার ও জানার সুযোগ রাখেন। তাই আপনার নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা চাই।
আর আপনি যদি কোন ভাবে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন তবেই কেবল আপনার বেস্ট ভার্সনটাকে আবিষ্কার করা সম্ভব। তাই আজকের আয়োজন আমরা ২টি উপায় নিয়ে আলোচনা করতে চাই যা কিনা আপনার আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেতে দূর্দান্ত কাজে দিবে আশা করছি। তো, শুরু করা যাক-
১. আপনার মূল্যবোধ সর্ম্পকে জানুন
ব্যাক্তিগত মূল্যবোধ যে কারো কাছে বড় এক আবেগ। আমরা যখন এইগুলোে নিয়ে কথা বলি তখন প্রায়ই নিজেকে নিয়ে অন্য জগতে চলে যাই।
এটার জন্য আমরা কখনো কোন কিছুর সাথে আপোস ও করিনা। কিন্তু আমাদের অন্তর্নিহিত মূল্যবোধকে আমরা কয় জনই বা উদ্ধার করতে পারি।
এই জন্য অন্য আর সব কিছু থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে নিজের সর্ম্পকে জানা।নিজের সর্ম্পকে যতবেশি জানবেন ততবেশি আত্নবিশ্বাসি হতে পারবেন।
আক্ষরিক অর্থে না নিলে আপনাকে একটা জিনিষ বলতে চাই, জীবনবোধ আপনার ভেতরের ১০ হাজার ফুট গভীরে লুকিয়ে বা রক্ষিত আছে।
আপনি কি সেটা জানেন? এবং তারা আপনার জন্য বিল্ডিং ব্লক বা ভিত্তিপ্রস্তুর হিসেবে কাজ করে।
ব্যক্তি জীবনে পৃথিবীর কোন জিনিসটাকে বেশি গুরুত্ব দিবেন, আর কোনটাকে দিবেন না? কোনটা আপনার পরিবারকে আনন্দ দেয়? এই সবকিছু আপনার নিজেকে বের করতে হবে।
কিছু সময় কিছু লোক আপনাকে হতশাগ্রস্ত, বিচলিত করে তোলে? এর কারণ আর কিছুই না, কেবলমাত্র আপনার কোনো একটা মূল্যবোধ যে তাদের সাথে মিলে নি এই যা। হয়তো আপনার কোনো একটা মৌলিক অংশকে অস্বীকার করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সেই সময় গুলোর কথা চিন্তা করেন তো যখন সত্যিই নিজেকে প্রাণবন্ত এবং অস্মভব ভালোলাগা অনুভব করেছেন? এটা তখনই ঘটেছে যখন আপনার এক বা একাধিক মূল্যবোধকে অ্যাপ্রেসিয়েট করা হয়েছে।
তার মানে আপনাকে এটা বোঝানো হচ্ছে যে, আপনার মূল্যবোধ অনুসরন করে জীবন যাপন করে আপনি আসলেই শান্তি অনুভব করেন। শুধু তাই নই, এসবকিছু আপনাকে আরো বেশি কিছু দিতে পারে।
আপনার যথাযথ জীবনমূল্য সব সময় আপনার কাছেই। যাই ঘটে যাক না কেনো এটা আপনার কাছে থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
আপনি নিজের উপর আস্থা রাখতে পারেন না সবসময়, কারন অন্যদের দ্বারা মূল্যয়িত হতে কিংবা স্বীকৃতি পাওয়াকে আপনার লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেন। আর এই জন্য অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীরা তাদের স্বার্থউদ্ধারে আপনাকে ব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে যায়।
তাই বলি কি, এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন তখনিই, যখন আপনি আপনার মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারবেন। সে অনুযায়ী আপনি পছন্দ-অপছন্দ করা শুরু করবেন। এবং সে মোতাবেক আপনার জীবন সংগ্রামকে আলোকপাত করতে পারবেন।
এটা কিন্তু খুবই সহজ। একবার সময় নিয়ে নিজের মূল্যবোধগুলোকে বোঝার, জানার চেষ্টা করে দেখেন, এটা আপনাকে আমেজিং বোধ করাবে। কারন তখনই কেবল আপনার ভেতরের আমিটা বাস্তব জগতে বসবাস করার সুযোগ পাবে।
২. নিয়মিত অনুশীলন বা ব্যায়াম
আত্নবিশ্বাস আপনার শরীরের একটি অদৃশ্য পেশীর মত। যা ঠিকমত চর্চা না করলে, অনুশীলন না করলে শরীরের আর দশটা পেশীর মত সংকোচিত হয়ে যাবে। এমন অকেজো হয়ে যেতে পারে।
তাই আপনার জন্য অন্যতম একটা জরুরী কাজ হচ্ছে এই পেশীকে নিয়মিত সচল রাখা যাতে এটি কখনো সংকোচিত না হয়, নষ্ট না হয়।
কিন্তু সমস্যা হল, দৃশ্যমান অঙ্গের থেকে এই আত্মবিশ্বাস নামক পেশীটা একটু ভিন্ন। কারন যেকোন পেশীর সেপ একটা নিদিষ্ট জায়গাই থাকে। অথচ আত্নবিশ্বসের বাইসেপকে এক জায়গাই খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন কাজ।
তাহলে আপনি কিভাবে আপনার এই পেশীকে শক্ত করবেন? আর কিভাবেই বা এটিকে বিকশিত করবেন?
এই কাজটা জীম কিংবা অন্য এক্সারসাইজের মতই। আত্নবিশ্বাসের ক্ষেত্রেও একই ধরণের একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে চর্চা করার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও কৌশলহত ডিজাইন তৈরি করতে হবে।
হয়তো, আপনি এমন একজন মানুষ যে কোনো প্রকার রিস্ক নেন না। যে কারণে প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন খুব ভালোভাবে সম্পূর্ণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান। এবং আপনি নিজেকে রেগুলার কাজের বাইরে অন্য কিছুতে প্রসারিত করছেন না।
হয়তো নিজেকে নতুন বা ভিন্ন কিছু করা থেকে বিরত রাখেন। কারন আগেই কাজটা আপনি পারবেন না বা ভালোমত পারবেন না এই চিন্তা করতে থাকেন। আর এতে আপনার ভিতরে তৈরী হয় হেরে যাবার ভয়।
এই ধরণের মানুষগুলোর ক্ষেত্রে কোনো কাজ নতুনভাবে করা প্রায় কঠিন হয়ে পরে। তাই যেসব কাজ তারা পারে সেটাতেই তারা নিজেদের জীবনকে সীমাবদ্ধ রেখে কমফোর্টেবল জোনেই থেকে যায়।
এতে করে নিজের ভেতরে এই চিন্তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, জীবনে যত কম ঝুঁকি নেওয়া যায় ততই ভালো। আর এই অবস্থানের কারণে আত্নবিশ্বাসও থাকে তলানীতে।
তাই আত্নবিশ্বাসের পেশিকে সচল করাতে হলে অবশ্যই আপনাকে ঝুঁকি নিতে হবে। সেটা বড় ধরনের হোক কিংবা ছোট।
এই জন্য আপনার নিজেকে কোনো অপরিচিত দিকে বিকশিত করতে হবে। নতুন কিছু করার বা ভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে কিছু করার চেষ্টা করতে হবে।
চারেপাশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য আপনি নিজের চিন্তার জানালাগুলো খুলে দেন। কী জানেন, কী পারেন, প্রথমে সেই বিষয়গুলোরই নব ধারা বা উন্নত ধারা বিকশিত করার উদ্যোগ হাতে নেন।
আপনি যত বেশি সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরী করতে চান, আপনাকে ততবেশী রিস্ক নিতে হবে। আর এই জন্য আপনাকে ততবেশি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে।
মজার বিষয় হচ্ছে এটা অনেকটা ভাইস ভারসার মত। আপনি যত বেশী রিস্ক নিবেনে, আপনি তত বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। আবার আপনার আত্মবিশ্বাস যত বাড়তে থাকবে, আপনার রিস্ক নেবার সক্ষমতাও তত বাড়বে।
এটাই আপনার আত্নবিশ্বাস নামক অদৃশ্য পেশী। এখন প্রশ্ন হল- আপনি এই অনুশীলনটা শুরু করবেন কখন থেকে?